১৯৮০ সালের পরবর্তী সময়ে নুর মিয়া শহরের একাডেমী রোডে চালু করেন বিলাসী সিনেমা হল নামের আরও একটি সিনেমা হল। বিনোদনের জন্য নিরাপত্তা, পরিবেশ ও আসন ভালো থাকায় সুরত সিনেমা হল ও দুলাল সিনেমা হলই দর্শকদের পছন্দের তালিকায় ছিল। এসব হলে প্রতি শো’তে ৭০০ থেকে ৮০০ জনের টিকেট বিক্রি হতো। অন্য সিনেমা হলগুলোতে ভালো ছবি না চললে দর্শক সমাগম কিছুটা কম হতো। সেখানেও প্রতি শোতে ৪০০ থেকে ৬০০ দর্শকের সমাগম ঘটতো। শহরের চারটি সিনেমা হলে প্রতিদিন অন্তত ১০ থেকে ১২ হাজার দর্শক বিনোদিত হতেন।

২০০৩ সালের দিকে ফেনীর জনপ্রিয় হল সুরত মহলের মালিক আফজালুর রহমান মারা যাওয়ার পর তার ছেলে বাচ্চু মিয়া সিনেমা হলটির দায়িত্ব নেন। এক পর্যায়ে বাড়তি আয়ের জন্য বাচ্চু মিয়া সিনেমা হলটি ভেঙ্গে দোকানঘর করে ভাড়া দেন। শহরের একাডেমি রোডের বিলাসী সিনেমা হলটির প্রতিষ্ঠাতা নুর মিয়া মারা যাওয়ার পর তার ছেলেরা তৎকালীন কমিশনার ওমর ফারুকের কাছে ভাড়া দিয়ে দেন। একপর্যায়ে ভালো ছবি না পাওয়ায় দর্শক কমতে থাকে। লোকসানের মুখে পড়ে ২০০২ সালের দিকে সিনেমা হলটি তিনি ছেড়ে দিলে আর কেউ চালু করতে এগিয়ে আসেনি। এদিকে শহরের মাস্টার পাড়া রাস্তার মাথায় কানন সিনেমা হলটি ২০২০ সাল পর্যন্ত ডিমেতালে চলে আসছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে কয়েকমাস বন্ধ থাকায় কর্মচারীরা অন্য পেশায় চলে গেলে মালিক পক্ষ সিনেমা হলটি ভেঙ্গে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেন। সবশেষ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত থেমে থেকে চলছিল শহরের স্টেশন রোডস্থ দুলাল সিনেমা হল। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকেই সেটি ভেঙে বহুতল বিপনী বিতান ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে মালিকপক্ষ। এর মাধ্যমে ফেনীতে সিনেমা হলের ইতিহাসের অবসান ঘটেছে।

 

 

একসময় নিয়মিত সিনেমা দেখতেন ষাটোর্ধ্ব আলতু মিয়া। একে একে সিনেমা হলে বন্ধ হয়ে যাওয়া আফসোস করে বলেন, ‘আমরা ছোট বেলায় বন্ধুদের সাথে নিয়ে ফেনীতে সিনেমা দেখতে আসতাম। তখন চার আনায়, আট আনায় টিকিট কিনে ছবি দেখেছি। তখনকার সময় বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল টিকিট কিনে হলে বসে ছবি দেখা। এসব সিনেমা হল ভেঙে সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। ফেনীর মানুষ আর কোনোদিন সিনেমা হলে ছবি দেখার সুযোগ পাবে না, ভাবতেই কষ্ট লাগে।’

দুলাল সিনেমা হলের মালিক ইঞ্জিনিয়ার সফিউদ্দিন বেলাল বলেন, ‘একসময়ে সিনেমা হলের দর্শকদের ভিড় সামাল দিতে আইনশৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতা লাগত। তখন সিনেমা হলের ব্যবসায় আভিজাত্য ছিল। জৌলুস ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ভালো অভিনেতা নেই, ভালো ছবি নেই, তাই দর্শকও নেই। তাই বাধ্য হয়েই সিনেমা হলটি বন্ধ করে দিয়েছি।’

একই সিনেমা হলের ক্যাশিয়ার গোলাম নবী জানান, সর্বশেষ ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘ভালোবাসা জিন্দাবাদ’ চলচ্চিত্রটি দেখানো হয়। ওই সময়ে পুরো দিনে ১/২টি শো চলতো। কোনো শো’তে ৮ জন আর কোনো শো’তে ১০/১২ জন দর্শক পাওয়া যেত। আটটি ভিআইপি সিটে ১০০ টাকা টিকেট, ২০ জনের কেবিন সিটে ৮০ টাকা, ৬০ জনের ব্যালকনিতে ৭০ টাকা এবং প্রথম শ্রেণির ৮০ সিটে ৬০ টাকা করে টিকেট বিক্রি করা হয়েছিল।