Home » রুচির দুর্ভিক্ষের অপ-সংস্কৃতিতে দেশ-কাল-মানুষ
চলচ্চিত্র বিনোদন লিড নিউজ

রুচির দুর্ভিক্ষের অপ-সংস্কৃতিতে দেশ-কাল-মানুষ

জাহিদ হোসেন: আমাদের দেশের সাহিত্যশিল্প চিত্রশিল্প ভাস্কর্য নৃত্য সঙ্গীত চলচ্চিত্র পথনাটক মঞ্চনাটক টিভিনাটক যাত্রাপালা বেতার-শিল্প শিক্ষামাধ্যম খাদ্যমান ধর্ম রাজনীতি অর্থনীতি সংবাদমাধ্যম দেশমাতৃকা সমাজকল্যান সামাজিকসম্পর্কও প্রশাসনসহ বেশকিছু শিল্প মানব মানদন্ড মনন উন্নয়নের শিল্প-মাধ্যম রয়েছে। বহুকাল সময় ধরে এ সকল মাধ্যমে পরীক্ষিত অভিজ্ঞ যোগ্যতর পেশাজীবিরা পেশাদারিত্বের দায়ভার নিজ স্কন্ধে বহন করে যার যার শিল্পক্ষেত্র মাধ্যমে যথাযথ কর্মপালনে আত্মনির্ভর। বেশ ব্যার্থতাও রয়েছে তবে সার্থকতাও কম নয়।

যেখানে অধিকাংশ মানুষের ভাষা এক, জাতীয়তাবাদ এক, ধর্ম এক, ভৌগলিক কাঠামো ও পরিবেশ এক, এমনকি প্রকৃতির ষড়ঋতু এদেশের মানুষকে এক অনন্য শৈল্পিক ও আন্তরিক বৈশিষ্ট্য মননে গড়ে তুলেছে।
এদেশের মানুষ এতোকিছুর সমন্বয়ের শক্তিতে শত হাজার বছর পূর্ব থেকে নদীসৃষ্ট বন্যা, ঝড় এবং সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস অনাবৃষ্টি খাদ্যসংকট দুর্ভিক্ষ ও রোগবিরোগের মহামারিসহ বহির্বিশ্বের রাজনৈতিক আগ্রাসন হত্যা লুনঠন অত্যাচার দখল শাসন ভেদ করে ১৯৭১ সালে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই বহির্জাতির দ্বারা অপরাজনৈতিকভাবে নিগৃহীত অত্যাচারীত মানুষেরা মহান মুক্তিযুদ্ধের ঝাঁপিয়ে পরে বাংলার সমতট ভূমিকে স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। যা বিশ্বে এক বিরল রাষ্ট্র ও জাতির উদাহরণ।

প্রযুক্তি, উন্নয়নের সবচেয়ে বড় ও ব্যাপক সহায়ক এক মাধ্যম। কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর ক্রমান্নয়ে এ দেশে উপরের প্রথম প্যারায় উল্লেখিত সাহিত্য হতে যা কিছু উল্লেখিত শিল্প-মাধ্যম গুলো বিশেষ করে সর্বাগ্রে রাজনীতিতে অনভিজ্ঞদের প্রবেশ থেকে শুরু করে দেশের এমন কোন শিল্প মাধ্যম নেই যেখানে অযোগ্য অনভিজ্ঞ অপরিপক্ক লোলুপ সুযোগসন্ধানী অপব্যবহারকারীদের প্রবেশ না ঘটেছে। বিপর্যয়টি এখানেই ঘটে গেছে।

এখন শিল্প প্রযুক্তির মুক্ত ও অবাধ ব্যবহার বিশেষ করে ফেসবুক ইউটিউব ওটিটি বলতে সামাজিক মাধ্যমে যা কিছু বিদ্যমান তার অবাধে এরা নিজেদের রুচি অরুচির স্বেচ্ছাচারীতা নিয়ে প্রতিনিয়ত ব্যাবহার করে যাচ্ছে। দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী এই প্রযুক্তির অন্তর্ভূক্ত ও উদার হস্তের ও মননের ব্যবহারকারী। না আছে কোন জবাবদিহিতা, না আছে কোন সেন্সর করার প্রক্রিয়া। আর এটাই এখন বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের হাতিয়ার বলে কথিত। অথচ এই প্রযুক্তির সুযোগ নিয়েই অযোগ্য অনভিজ্ঞ অপরিপক্ক লোলুপ সুযোগসন্ধানী অপব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রপট অনেক ব্যাপক ও প্রসারিত হয়ে গড়ে উঠেছে। আর এর জন্যই দেশের সকল মাধ্যমেই রুচির দুর্ভিক্ষের দেখা দিয়েছে এবং আগামীতে মানুষের রুচি’কে ব্যাপক মহামারীর কবোলে পড়তে হবে।

এ প্রযুক্তিতে মূল্যায়নের প্রকাশ শক্তি কিন্তু সৃজনশীলতার উপর নির্ভরশীল নয়। শুধুমাত্র লাইক শেয়ার আর ভিউজের সংখ্যা যার একমাত্র মূল্যায়নের মাপকাঠি। তার এই মাপকাঠির যাদুতেই ব্যাংক একাউন্টে ঢুকে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রেমিটেন্স। যেখানে ক্রিয়েটিভের চেয়ে পপুলারিটির মূল্যায়ন অনেক বেশী, ফলে সেখান থেকেই রুচির দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়, আর এই সৃষ্টির রূপ মহামারি আকার ধারণ করা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। অতএব, যতই এর লাগাম আলোচনায় কি সমালোচনায় টেনে ধরার চেষ্টা করা হউক না কেন, ততই এর ক্ষমতা গুন থেকে দ্বিগুন হতে থাকে। এটি এমন করেই গুজব মিথ্যাচার অপপ্রচার ও অপসংস্কৃতির অচ্ছুৎ ভাগাড়ের ক্ষেত্রপটে রূপান্তরিত হচ্ছে।

এখানে শিল্পের শৈল্পিকতার জয়ের পথ দূর্গম ও দুরুহ্। আর রুচির দুর্ভিক্ষ উত্তরণে এ প্রযুক্তির শিল্পের মাঝে অন্তর্ভূক্ত অরুচিকর অপশক্তি অপরিপক্ক শৈলীহীন সুযোগসন্ধানী লোলুপ দূর্বৃত্তকারী বিকৃতমনন অজ্ঞ ও অশিক্ষিত মানুষেরাই প্রধান অন্তরায়‌ ।।

Featured